জুম'আর নামাজ
শুক্রবার দ্বিপ্রহর (দুপুর) এর পর হইতে আছরের ঠিক আগ পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্তে এই নামাজ (সালাত) পড়া হয়। ইমাম ছাড়া তিন বা ততোধিক লোক একসাথে (জামাতে) আরবি খুতবাহ পাঠ করে, যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত ফরজ নামাজ (সালাত) পরিতে হয়।
{getToc} $title={Table of Contents}
জুম'আর নামাজ (সালাত) ফরজ, তবে ঐসব পুরুষদের জন্য়, যাদের উপর জাম'আতে নামাজ (সালাত) আদায় করা ওয়াজিব।

জুম'আর নামাজের গুরুত্ব
জুম'আ (শুক্রবার) এর নামাজ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- "হে মুমিনগণ! জুম'আর দিনে যখন নামাজের জন্য় আহ্বান করা হবে তখন তোমরা আল্লাহর স্মরনে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্য়াগ কর। এটাই তোমাদের জন্য় শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্দি কর।" (সূরা জুম'আঃ ৯)
অর্থাৎ আযান হওয়া মাত্র সকল কাজ বাদ দিয়ে নামাজ (সালাত) আদায়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও প্রাধান্য় দিতে হবে। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে- নামাজ (সালাত) এ দৌড়ে-দৌড়ে এসতে হবে। কারণ দৌড়ে এসে নামাজ (সালাত) এ শরীক হওয়ার ব্য়পার টি হাদীসে নিষেদ আছে। তাই, নামাজ (সালাত) এ আসার সময় বিনয়ের সাথে আসতে হয়।
সর্বপ্রথম জুম'আঃ
প্রথম হিজরীতে, হিজরতের পর নবী করিম (সাঃ) এর মদীনা আগমনের সাথে সাথে জুম'আ ফরয হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সর্বপ্রথম জুম'আ পড়েছিলেন মদীনার কুবা মসজিদে এবং মসজিদে নববীর মধ্য়বর্তী- বনু সালেম ইবনে আউস- গোত্রে (ইবনু শইবা, তারীখুল মদীনাঃ ১-৬৮)। পরবর্তীতে ওই জায়গায় -মসজিদে জুম'আ- নামের মসজিত নির্মাণ করা হয়। তারপর নবী করিম (সাঃ) মসজিদে নববীতে জুম'আ নামাজ (সালাত) আদায় করেন।
আমাদের কিছু ইছলামিক পোস্ট
- নামাজর ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব সমূহ
- ছয় কালেমা- অর্থ সহ ইংরেজি ও বাংলা উচ্চারণ
- অজু , অজুর নিয়ম, অজুর দোয়া
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রাকাত এবং নিয়ত
জুম'আর নামাজের বিবরণ
শুক্রবার (জুম'আ) র দিনে মসজিদে প্রবেশ করার পর কি কি নামাজ (সালাত) পরতে হয়, চলুন যেনে নেওয়া যাক।
- মসজিদে প্রবেশ করেই দুই রাকাত তাহিয়াতুল ওযু এবং দুই রাকাত দুখলুল মসজিদের মোস্তাহাব নামাজ আদায় করা। (ঐচ্ছিক)
- চার রাকাত কাবলাল জুম'আর সুন্নত নামাজ একাকী আদায় করা।
- ইমামের খুতবা পাঠ মনোযোগ দিয়ে শুনা। (খুতবা শুনা ওয়াজিব)
- ইমামের সাথে দুই রাকাত জুম্মার ফরজ নামাজ আদায় করা।
- চার রাকাত রাকাত বাদাল জুমার সুন্নত নামাজ একাকী আদায় করা। (বিঃদ্রঃ - ফরজ নামাজের পর তাৎক্ষণিকভাবে মসজিদ ত্যাগ না করা)
জুম'আ এবং যোহর নামাজের পার্থক্য়
শুক্রবার (জুম'আ) এবং যোহরের নামাজের মাধ্য়ে পাচঁটি পার্থক্য় রয়েছে। দিনে মসজিদে প্রবেশ করার পর কি কি নামাজ (সালাত) পরতে চলুন যেনে নেওয়া যাক।
- যোহর সকল বিবেক সম্পন্ন মুমিন নর-নারীর উপর ফরজ, আর জুম'আর নামাজ সকলের উপর নয়।
- যোহর হল মূল সালাত (নামাজ) আর জুম'আ হল যোহরের পরির্তে পরা সালাত (নামাজ)।
- জুম'আর কিরা'আত প্রকাশ্য়ে আর যোহরের কিরা'আত অপ্রকাশ্য়ে (চুপে-চাপে)।
- জুম'আর ফরজ নামাজ (সালাত) দুই রাক'আত, আর যোহরের ফরজ নামাজ (সালাত) চার রাকা'আত।
- জুম'আর নামাজ (সালাত) এ খুতবা আছে কিন্তু যোহরের নামাজ (সালাত) এ খুতবা নাই।
জুম'আর সালাতের ওয়াক্ত
অধিকাংশ ওলামাদের মতে, জুম'আ এবং যোহরের নামাজ (সালাত) এর সময় একেই। অর্থাৎ ঠিক দুপুরে সূর্য যখন মাথার উপর থেকে পশ্চিমে কুছুটা ঢলে পড়লে জুম'আর সময় শুরু হয়। (বুখারীঃ ৪১৬৮)
জুম'আর নামাজে কতজন মুসুল্লী হলে নামাজ আদায় করা যায় এ বিষয়ে নির্দ্দিষ্ট কোনো হাদীস পাওয়া যায়নি। তবে, ওলামাদের মতে ইমাম ব্য়তীত কমপক্ষে তিন (৩) জন হলেই যথেষ্ট। ইমাম ইবনে তাইমিয়্য়া (রাঃ) এই অভিমতটি গ্রহন করেছেন এবং এটাই সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য় মত।
জুম'আর নামাজ কার উপর ফরজ
হুঁশ-জ্ঞান সম্পন্ন ও স্বাধীন প্রতেক মুসলমান পুরুষদের উপর জুম'আ ফরজ। তাই কিছু শর্ত পাওয়া যায় য়ার উপর জুম'আ নামাজ (সালাত) ফরজ-
- একজন মুসলমান হওয়া।
- বালেগ হওয়া (তবে নাবালেক শিশু জুম'আর নামাজ পড়লে সওয়াব পাবে)।
- হুঁশ জ্ঞান থাকা (কারণ বেহুঁশ বা পাগলের কোনো ইবাদত নাই)।
- পুরুষ হওয়া (কিন্তু, মহিলাদের উপর জুম'আর নামাজ ফরজ নয়, তবে পড়লে সওয়াব পাবে।
- স্বাধীন হওয়া (যেমন, গোলাম বা ক্রীতদাস হলে জুম'আ নামাজ ফরজ নয়)।
- মুকিম হওয়া (মুসাফির অবস্থায় জুম'আর নামাজ ফরজ নয়)।
- শরয়ী উজর না থাকা (অসুস্থ, ভয়ভীতি বা নিরাপত্তাহীনতায় থাকা)।
জুম'আর দিনের হয়া কিছু ঘটনা
এই জুম'আর দিনের কিছু বিশেষ ঘটনা ঘটেছিল এবং কিছু ঘটনা ঘটতে চলছে যেগুলো একজন মুসলমান হিসেবে জানা খুবই প্রয়োজনীয়।
- এই দিনে হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল।
- এই দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল।
- এই দিনে তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল (মুসলিমঃ ৮৫৪)।
- এই দিনে তাকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিল।
- এই দিনেই তাঁর তওবা কবুল করা হয়েছিল।
- এই দিনেই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছিল (আবু দাউদঃ১০৪৬)।
- এই দিনেই সিঙ্গায় (বাশী) ফুঁক দেওয়া হবে।
- এই দিনেই কেয়ামত হবে।
- এই দিনেই সকল সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে (আবু দাউদঃ১০৪৭)।
- প্রত্যেক নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা আকাশ পৃথিবী বাতাস পর্বত ও সমুদ্র এই দিনকেই ভয় করে (ইবনে মাজাহঃ ১০৮৪, ১০৮৫ এবং মুয়াত্তাঃ ৩৬৮)
আমাদের এই ব্লগে সময় কাটানোর জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ইসলামের শিক্ষা এবং জ্ঞানের জন্য় আমাদের এই ব্লগটি একটি উজ্জল পথ প্রদর্শন করবে বলে আশা করি। ধন্যবাদ,