﷽
নামাজ (Namaj /Prayer)
নামাজ এমন এক মাধ্যম যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত নিকটবর্তী লাভ করা যায়। তাই মৃত্যুর পরে আল্লাহ তায়ালার সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নিবেন। তাই একজন মুসলমানের সারা দিনে পাঁচবার (৫) সহীহ শুদ্ধ ভাবে নামাজ পড়তে হয়।
তবে নামাজ প্রথমে পাঁচ (৫) ওয়াক্ত ছিলো না, ছিলো ৫০ ওয়াক্ত। যেটা আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন যখন তিনি {নবী মুহাম্মদ (সাঃ)} মেরাজের রাতে আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ করতে যান।
{getToc} $title={Table of Contents}

মেরাজ থেকে ফেরার পথে মুসা (আলাইহিস সাল্লাম) নবীজিকে জিজ্ঞাসা করে বললেন আল্লাহ আপনাকে কি উপহার দিলেন? জবাবে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য পঞ্চাশ (৫০) ওয়াক্ত নামাজ উপহার দিয়েছে। তখন মুসা (আলাইহিস সাল্লাম), নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে বললেন, যে আপনার উম্মত পঞ্চাশ (৫০) ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারবে না।
Book:- Arihant 15 Practice Sets SSC Stenographer Grade C & D With 12 Solved Papers For 2023 Exams
সুতরাং, আপনি আল্লাহর কাছে আবার যান এবং নামাজ কমিয়ে নিয়ে আসুন। তখন আমাদের নবী আবার আল্লাহর কাছে যায় এবং পঞ্চাশ (৫০) ওয়াক্ত নামাজকে পঁয়তাল্লিশ (৪৫) ওয়াক্ত নামাজ করে নিয়ে আসে। আবারো মুসা (আলাইহিস সাল্লাম) এর সাথে দেখা হয় এবং তিনি একই কথা বলেন।
এরকম করেই আমাদের নবীজির পঁয়তাল্লিশ (৪৫) বার আল্লাহর কাছে যায় এবং পঞ্চাশ (৫০) ওয়াক্ত নামাজকে পাঁচ (৫) ওয়াক্ত নামাজ করে নিয়ে আসে।
পাঁচ (৫) ওয়াক্ত নামাজগুলো -
- ফজরের নামাজ
- জোহরের নামাজ
- আসরের নামাজ
- মাগরিবের নামাজ
- এশারের নামাজ
নামাজ শুরু করার আগে কিছু শর্ত বা নিয়ম আছে যেগুলো পুরোপুরি করতে হয়- যেমন শরীর থেকে নাপাক দূর করা বা শরীর পারিষ্কার করে রাখা। শরীরের নাপাকি আমরা দুই ধরনে পরিষ্কার করতে পারি- (১) অযু/অজু/ওযু করে এবং (২) গা-ধুয়ে।
নামাজের আহকাম ছয়টি (৬)-
- দেহ পাক থাকা
- কাপড় পাক থাকা
- নামাজের জায়গা পাক থাকা
- সতর (শরীর) ঢেকে নেওয়া
- কিবলামুখী হওয়া
- ওয়াক্ত (সময়) হলে নামাজ পড়া
অন্য পড়ুন:- দোয়া কুনুত | দোয়া কুনুতের অর্থ এবং ফজিলত | Dua Qunoot (Dua kunnot) in Bangla
নামাজের আরকান সাতটি (৭)-
- তাকবীর তাহরিমা দ্বারা নিয়ত বাঁধা
- দারিয়া নামাজ পড়া
- কুরআন তেলাওয়াত করে নামাজ পড়া (কেরাত পড়া)
- রুকু করা
- সিজদা করা
- শেষ বৈঠকে বসা
- সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা
আমাদের অন্য কিছু ইছলামিক পোস্ট
- ৬ কালেমা- অর্থ সহ ইংরেজি ও বাংলায় | 6 Kalima- In Bangla with Meaning - Al' Qur'an
- নামাজের প্রয়জনীয় সকল দোয়া - Namajer sokol dua somuh in Bangla
নামাজের সুন্নত কি কি?
প্রত্যেক নামাজ শুরু করার আগে নামাজের ভিতরে থাকা একুশটি (২১) সুন্নত পুরোপুরি করে নামাজ আদায় করা প্রত্যেকটা মুসলমানের কর্তব্য। চলুন নামাজে থাকার সুন্নতগুলো জেনে নেওয়া যাক-
- তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় দুই হাত কান পর্যন্ত উঠানো
- দুই হাতের আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিক খোলা রেখে কিবলামুখী রাখা
- তাকবীর বলার সময় মাথা না ঝুঁকানো
- ইমাম তাকবীরে তাহরীমা ও অন্যান্য তাকবীর প্রয়োজন পরিমাণ উচ্চস্বরে বলা
- বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে নাভির নিচে বাধা
- সানা পড়া
- আউযুবিল্লাহ পড়া
- বিসমিল্লাহ পড়া
- ফরজ নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়া
- সূরা ফাতেহা পড়ার পর আমীন বলা
- সানা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ এবং আমীন আস্তে বলা
- সুন্নত পরিমাণ কিরাত পড়া
- রুকু-সেজদায় তিন তিনবার তাসবীহ পড়া
- রুকুর অবস্থায় মাথা ও পিঠ নিতম্বের সমান রাখা এবং হাতের আঙ্গুলগুলো খোলা রেখে হাটুতে শক্ত করে ধরা
- রুকু থেকে উঠতে ইমাম সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ, মুক্তাদি রাব্বানা লাকাল হামদ, আর মুনফারিদ উভয়টি বলা
- সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে দুই হাটু, এরপর দুই হাত অত:পর কপাল রাখা
- দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠক, প্রথম ও শেষ বৈঠক বাম পা বিছিয়ে এর উপর বসা। ডান পা এমনভাবে খাড়া রাখা যে, আঙ্গুলের মাথা কিবলামুখী থাকে। আর দুই হাত রানের উপর রাখা।
- তাশাহহুদে “আশহাদু আল্লা ইলাহা” বলার সময় শাহাদত আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করা
- শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দুরূদ শরীফ পড়া।
- দুরূদ শরীফের পর দোয়ায়ে মাছুরা পড়া
- প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম ফিরানো
অন্য পড়ুন:- অজু , অজুর নিয়ম, অজুর দোয়া | Rules and regulation of Wudu (Oju) in Bangla - Al' Qur'an
নামাজে থাকা ওয়াজিব কাজগুলো কি কি?
নামাজে ১৪টি ওয়াজিব (প্রয়োজনীয় কাজ) রয়েছে। এই সমস্ত কাজকে "ওয়াজিব কাজ" হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যদি তাদের মধ্যে কোনটি অবহেলা করা হয়, তবে সিজদায় সাহুকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সিজদায় সাহু বলতে অবহেলা করলে পুনরায় নামায পড়তে হবে। চলুন নামাজে থাকার প্রয়োজনীয় কাজগুলো জেনে নেই-
- প্রত্যেক নামাজে সুরা ফাতিহা (আলহামদুলিল্লাহ) পড়া
- প্রত্যেক নামাজে সুরা ফাতিহার পর অন্য সুরা মিলনো (সুরাটি কমপক্ষে তিন আয়াত বা তার থেকে বেশি আয়াতের হয়)
- ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাত কিরায়েত করে পরা (শুধু আসরের নামাজে মনে মনে কিরায়েত করা)
- কিরাআত, রুকু, সিজদার মধ্যে ক্রমধারা (তারতিব) ঠিক রাখা
- কাওমা করা অর্থাৎ রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো
- বৈঠক করা অর্থাৎ দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা
- তাদিলে আরকান করা অর্থাৎ রুকু, সিজদা, কাওমা, জলসায় কমপক্ষে এক তাসবিহ পরিমাণ স্থির থাকা। যাতে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যথাস্থানে পৌঁছে যায়
- কাদায়ে ওলা অর্থাৎ তিন বা চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাজে দুই রাকাআত পর আত্তাহিয়াতু পড়া বা সম-পরিমাণ সময় বসা
- প্রথম ও শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া
- জাহেরি নামাজে প্রথম দুই রাকাআত ইমামের জন্য উচ্চস্বরে কিরাআত পড়া এবং সিররি নামাজের মধ্যে ইমাম ও একাকি নামাজির অনুচ্চ শব্দে কিরাআত পড়া
- সালাম ফিরানো। অর্থাৎ ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে নামাজ শেষ করা
- বিতরের নামাজের দোয়ায়ে কুনুত পড়ার জন্য অতিরিক্ত তাকবির বলা এবং দোয়ায়ে কুনুত পড়া
- দুই ঈদের নামাজে ছয় ছয় তাকবির বলা
- প্রত্যেক রাকাআতের ফরজ এবং ওয়াজিবগুলোর তারতিব (ধারাবাহিকতা) ঠিক রাখা।
নামাজ ভাঙ্গার কারণ সমূহ
প্রত্যেক মুসলমানের উপর নামাজ পড়া ফরজ (বাধ্যতামূলক)। তাই আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর পর সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নিবেন। তাই, আমাদের নামাজ সহহি শুদ্ধ করে পড়া উচিত। নামাজ পড়ার আগে আমাদের কিছু কথা মাথায় রাখতে হবে; তা না হলে আমাদের নামাজ পুরোপুরি হবে না (মানে নামাজ ভেঙ্গে যাবে)। তাই নামাজ ভাঙ্গা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ জেনে নেওয়া যাক-
- নামাজের ভেতর অযথা শব্দ করলে বা কথা বললে
- কোন লোক সালাম দিলে বা তার জবাব ফেরালে
- বিনা কারণে কাশি দিলে
- বিপদে বা বেদনায় শব্দ করিয়া কাদা
- তিন তসবি পরিমাণ সময় সতর খুলিয়া থাকিলে
- মুক্তি ব্যতীত অপর ব্যক্তির লোকমা নেওয়া
- সুসংবাদ বা দুঃসংবাদের উত্তর দেওয়া
- নাপাক জায়গায় সিজদা করালে
- কেবলার দিক হইতে সানী কুরিয়া যাওয়া
- নামাজে কোরআন শরীফ দেখিয়া পড়া
- নামাজে শব্দ করিয়া হাসালে
- নামাজের দুনিয়াবী কোনো কিছুর প্রার্থনা করলে
- নামাজে খাওয়া ও পান করলে
- ইমামের আগে মুক্তাদি দাঁড়ালে বা বসলে